বেদ হিন্দুদের প্রাচীনতম ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম। এর চারটি মূল অংশ রয়েছে: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ। বেদ (সংস্কৃত véda
वेद " জ্ঞান ") প্রাচীন ভারতে লেখা হয়েছে। তারা সংস্কৃত সাহিত্যের
পুরনোতম স্তর সংগঠিত করে হিন্দুধর্মের উপর। এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ
হিন্দুদের। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী, বেদ একটি মানবিক গ্রন্থ নয়। বৈদিক
মন্ত্রগুলো হিন্দুদের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কাজ এবং অন্যান্য মঙ্গলজনক কাজে
পড়া হয়। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ
হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের
বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র,
ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ
করেন। তাই এঁদের বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে বেশ
কয়েকজন মহিলাও ছিলেন, যেমন বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি।
উৎপত্তি ও ব্যবহারের রীতিনীতি
সংস্কৃত শব্দ véda " জ্ঞান" মূল বে- থেকে উৎপত্তি নির্ণয় করা হল " জানতে "। এটি চার বিধিসম্মত বেদের সঙ্গে সহযোগী (ঋগ্বেদ, যজু বেদ, সাম
বেদ ও অথর্ব বেদ) যদিও তথ্যসূত্র অনুযায়ী এটি যুক্ত ছিলো ব্রাহ্মন, আর্য
এবং উপনিষদের সাথে। বেদের এক নাম শ্রুতি। এর কারণ, লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে
দীর্ঘকাল বেদ ছিল মানুষের স্মৃতিতে বিধৃত। গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি
অর্থাৎ শ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করা হতো। যেহেতু শোনা বা
শ্রুতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটত তাই এ থেকে বেদের এক নাম হয়
শ্রুতি। বেদকে ত্রয়ীও বলা হয়। এর কারণ, বেদের মন্ত্রগুলি আগে ছিল
বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহারের সুবিধার্থে মন্ত্রগুলিকে
ঋক্, যজুঃ, সাম এই তিন খণ্ডে বিন্যস্ত করেন। তাই বেদের অপর নাম হয়
সংহিতা। বেদ চারখানা হলেও চতুর্থ অথর্ববেদ অনেক পরবর্তীকালের রচনা এবং এর
কিছু কিছু মন্ত্র প্রথম তিনটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যজ্ঞে এর
ব্যবহার নেই। অবশ্য বেদকে ত্রয়ী বলার অন্য একটি কারণও আছে এবং তা হলো: এর
মন্ত্রগুলি মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিনটি স্বরলক্ষণ দ্বারা
বিশেষায়িত, যার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রগুলিকে উপর্যুক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা
হয়েছে।বেদের রচনাকাল সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। এ নিয়ে প্রাচ্য ও
পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্যও দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, বেদ
রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা
মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়।
বেদ চার ভাগে বিভক্ত
বেদের বিধিসম্মত ভাগ চারটি (turīya)।বেদের চারটি অংশ মন্ত্র বা সংহিতা,
ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ্। মন্ত্রাংশ প্রধানত পদ্যে রচিত, কেবল
যজুঃসংহিতার কিছু অংশ গদ্যে রচিত। এটাই বেদের প্রধান অংশ। এতে আছে
দেবস্তুতি, প্রার্থনা ইত্যাদি। ঋক্ মন্ত্রের দ্বারা যজ্ঞে দেবতাদের আহ্বান
করা হয়, যজুর্মন্ত্রের দ্বারা তাঁদের উদ্দেশে আহুতি প্রদান করা হয় এবং
সামমন্ত্রের দ্বারা তাঁদের স্তুতি করা হয়। ব্রাহ্মণ মূলত বেদমন্ত্রের
ব্যাখ্যা। এটি গদ্যে রচিত এবং প্রধানত কর্মাশ্রয়ী। আরণ্যক কর্ম-জ্ঞান
উভয়াশ্রয়ী এবং উপনিষদ্ বা বেদান্ত সম্পূর্ণরূপে জ্ঞানাশ্রয়ী।বেদের
বিষয়বস্তু সাধারণভাবে দুই ভাগে বিভক্ত কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড। কর্মকাণ্ডে
আছে বিভিন্ন দেবদেবী ও যাগযজ্ঞের বর্ণনা এবং জ্ঞানকাণ্ডে আছে ব্রহ্মের
কথা। কোন দেবতার যজ্ঞ কখন কিভাবে করণীয়, কোন দেবতার কাছে কি কাম্য, কোন
যজ্ঞের কি ফল ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের আলোচ্য বিষয়। আর ব্রহ্মের স্বরূপ কি,
জগতের সৃষ্টি কিভাবে, ব্রহ্মের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক কি এসব আলোচিত হয়েছে
জ্ঞানকাণ্ডে। জ্ঞানকাণ্ডই বেদের সারাংশ। এখানে বলা হয়েছে যে, ব্রহ্ম বা
ঈশ্বর এক, তিনি সর্বত্র বিরাজমান, তাঁরই বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ বিভিন্ন
দেবতা। জ্ঞানকাণ্ডের এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে ভারতীয়
দর্শনচিন্তার চরম রূপ উপনিষদের বিকাশ ঘটেছে। এসব ছাড়া বেদে অনেক সামাজিক
বিধিবিধান, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, চিকিৎসা ইত্যাদির কথাও
আছে। এমনকি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথাও আছে। বেদের এই সামাজিক
বিধান অনুযায়ী সনাতন হিন্দু সমাজ ও হিন্দুধর্ম রূপ লাভ করেছে। হিন্দুদের
বিবাহ, অন্তেষ্টিক্রিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও বৈদিক রীতিনীতি যথাসম্ভব
অনুসরণ করা হয়।ঋগ্বেদ থেকে তৎকালীন নারীশিক্ষা তথা সমাজের একটি পরিপূর্ণ
চিত্র পাওয়া যায়। অথর্ববেদ থেকে পাওয়া যায় তৎকালীন চিকিৎসাবিদ্যার একটি
বিস্তারিত বিবরণ। এসব কারণে বেদকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়, প্রাচীন
ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি দলিল হিসেবেও
গণ্য করা হয়।
nice
ReplyDeleteঅপূব বেদ
ReplyDeleteচমৎকার বেদ
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteচার টি বেদ এর নাম কি
ReplyDeleteচার টি বেদ এর নাম কী কী
ReplyDeleteKhub Valo
ReplyDeleteহরে কৃষ্ণ
ReplyDeleteবেদ সনাতন ধর্মের প্রাচীন এবং পবিত্র গ্ৰণ্ত
হরে কৃষ্ণ
ReplyDeleteবেদ সনাতন ধর্মের প্রাচীন এবং পবিত্র গ্ৰণ্ত
দারুন
ReplyDelete