Sunday, 6 January 2013

হিন্দুধর্ম কথা

হিন্দুধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম তথা একটি দেশীয় ধর্মবিশ্বাস। হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ স্বীয় ধর্মমতকে সনাতন ধর্ম (सनातन धर्म) নামেও অভিহিত করেন। হিন্দুধর্মের সাধারণ "ধরনগুলির" মধ্যে লৌকিক ও বৈদিক হিন্দুধর্ম থেকে বৈষ্ণবধর্মের অনুরূপ ভক্তিবাদী ধারার মতো একাধিক জটিল মতবাদগুলির সমন্বয়ের এক প্রচেষ্টা লক্ষিত হয়। যোগ, কর্মযোগ ধারণা, ও হিন্দু বিবাহের মতো বিষয়গুলিও হিন্দুধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

হিন্দুধর্ম একাধিক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। লৌহযুগীয় ভারতের ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মে এই ধর্মের শিকড় নিবদ্ধ। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের "প্রাচীনতম জীবিত ধর্মবিশ্বাস" বা "প্রাচীনতম জীবিত প্রধান মতবাদ" আখ্যা দেওয়া হয়।
জনসংখ্যার বিচারে হিন্দুধর্ম খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলামের পরেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মমত। এই ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি হিন্দু বাস করেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে। এছাড়া নেপাল (২৩,০০০,০০০), বাংলাদেশ (১৪,০০০,০০০) ও ইন্দোনেশীয় দ্বীপ বালিতে (৩,৩০০,০০০) উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হিন্দুরা বাস করেন।
হিন্দুধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থের সংখ্যা প্রচুর। হিন্দুশাস্ত্র শ্রুতি ও স্মৃতি নামে দুই ভাগে বিভক্ত। এই গ্রন্থগুলিতে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও পুরাণ আলোচিত হয়েছে এবং ধর্মানুশীলন সংক্রান্ত নানা তথ্য বিবৃত হয়েছে। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেদ সর্বপ্রাচীন, সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল উপনিষদ্‌, পুরাণ, ও ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণমহাভারতভগবৎগীতা নামে পরিচিত মহাভারতের কৃষ্ণ-কথিত একটি অংশ বিশেষ গুরুত্বসম্পন্ন ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পেয়ে থাকে।

ঈশ্বর ধারণা


একেশ্বরবাদ, বহুদেববাদ,  সর্বেশ্বরময়বাদ, অদ্বৈতবাদ, নাস্তিক্যবাদ  সকল প্রকার বিশ্বাসের সমাহার দেখা যায় হিন্দুধর্মে। তাই হিন্দুধর্মে ঈশ্বরধারণাটি অত্যন্ত জটিল। এই ধারণা মূলত নির্দিষ্ট কোনো ঐতিহ্য অথবা দর্শনের উপর নির্ভরশীল। কখনও কখনও হিন্দুধর্মকে হেনোথেইস্টিক ধর্ম (অর্থাৎ, বহু দেবতা অস্তিত্ব স্বীকার করার পাশাপাশি এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ধর্মব্যবস্থা) বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এধরনের বর্গীকরণ অতিসরলীকরণের নামান্তর।
হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে মানুষের আত্মা শাশ্বত। অদ্বৈত বেদান্তের ন্যায় অদ্বৈতবাদী/সর্বেশ্বরময়বাদী দর্শন অনুসারে, আত্মা সর্বশেষে পরমাত্মা ব্রহ্মে বিলীন হয়। এই কারণেই এই দর্শন অদ্বৈত দর্শন নামে পরিচিত। অদ্বৈত দর্শনের মতে, জীবনের উদ্দেশ্য হল আত্মা ও ব্রহ্মের অভিন্নতা অনুভব করা।  উপনিষদে বলা হয়েছে, মানুষের পরমসত্ত্বা আত্মাকে যিনি ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্ন রূপে অনুভব করতে সক্ষম হন, তিনিই মোক্ষ বা মহামুক্তি লাভ করেন।
  
 
দ্বৈত ও ভক্তিবাদী দর্শনে ব্রহ্মের উপর ব্যক্তিত্ব আরোপিত হয়েছে। এই মতানুসারে সম্প্রদায়বিশেষে তাঁকে বিষ্ণু, ব্রহ্মা, শিব বা শক্তিরূপে পূজা করা হয়। আত্মা এখানে ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল এবং মোক্ষ নির্ভরশীল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম অথবা ঈশ্বরের অনুগ্রহের উপর। পরমসত্ত্বা রূপে ঈশ্বর হিন্দুধর্মে ঈশ্বর (প্রভু), ভগবান (পবিত্র ব্যক্তি) বা পরমেশ্বর (সর্বোচ্চ প্রভু) নামে আখ্যাত। অবশ্য ঈশ্বর শব্দের একাধিক ব্যাখ্যা রয়েছে। মীমাংসাবাদীরা ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন; আবার অদ্বৈতবাদীরা ব্রহ্মঈশ্বরকে অভিন্ন মনে করেন। অধিকাংশ বৈষ্ণব ঐতিহ্যে তিনি বিষ্ণু। বৈষ্ণব শাস্ত্রগুলি তাঁকে কৃষ্ণ বা কখনও কখনও স্বয়ং ভগবানের রূপে দর্শিয়েছে।


ইতিহাস

অর্থাৎ এক এক সম্প্রদায় এর লোক এক এক ধরনের কাজ করবে। অনেকের মতে হিন্দু শব্দটি আর্যদেরকে আফগানিস্তানের বাসিন্দা বা আফগানেরা দিয়েছে তারা সিন্দু নদের তীরবর্তী সনাতন ধর্মের সাধু সন্ন্যাসিদেরকে হিন্দু বলত, আর এই ভাবেই হিন্দু নামটি এসেছে। এই সনাতন ধর্মের সাধু সন্ন্যাসিরাই বেদ শ্রুতিবদ্ধ করেন অর্থাৎ ধ্যানের মাধ্যমে বেদ আয়ত্ব করেন। বেদ কোন একজন সাধু বা সন্ন্যাসির লব্ধকৃত নয়, বেদ হল বহু সাধু সন্ন্যাসিদের লব্ধকৃত এক মহান শ্রুতিবদ্ধ গ্রন্থ যা প্রথম অবস্থায় সবার মনে মনে ছিল পরে তাকে লিপিবদ্ধ করা হয়।তখন কার যুগে এই বেদের আধিপত্য ছিল ব্যাপক, অর্থাৎ সমাজের সকল কাজ বেদের মাধ্যমে চলত কারণ বেদে সমাজ চালানো, চিকিৎসা করা, গণনা করা এমন সব উপাদানই আছে। এই কারনে তখনকার সভ্যতাকে বলা হয় বৈদিক সভ্যতা। এই বৈদিক সভ্যতায় অর্থাৎ ঐ আমলে কোন মূর্তি পুজা করা হত না। সেই সময় হিন্দুদের প্রধান দেবতা ছিলেন ইন্দ্র, বরুন, অগ্নি এবং সোম। তারা যজ্ঞের মাধ্যমে পূজিত হত। তখনকার ঈশ্বর আরাধনা হত যজ্ঞ এবং বেদ পাঠের মাধ্যমে। সকল কাজের আগে যজ্ঞ করা ছিল বাঞ্ছনীয়। সে আমলে কোন মূর্তি বা মন্দির ছিল না।    হিন্দুধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ধর্ম তবে হিন্দু নামটি আধুনিকালের দেওয়া। এর প্রাচীন নাম হল সনাতন ধর্ম। আবার এই ধর্ম বৈদিক ধর্ম নামেও পরিচিত। এই ধর্ম বেদ এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এ ধর্মত্ত্বের মূল কথা হল ঈশ্বরের অস্তিত্বেই সকল কিছুর অস্তিত্ব এবং সকল কিছুর মূলেই স্বয়ং ঈশ্বর। খ্রীস্টপূর্ব ৫৫০০-২৬০০ অব্দের দিকে যখন কিনা হাপ্পান যুগ ছিল ঠিক সেই সময়ই এ ধর্মের গোড়ার দিক। অনেকের মতে খ্রীস্টপূর্ব ১৫০০-৫০০ অব্দ। কিন্তু ইতিহাস বিশ্লেষকদের মতে আর্য বা Aryan জাতিগোষ্ঠি ইউরোপের মধ্য দিয়ে ইরান হয়ে ভারতে প্রবেশ করে খ্রীস্টপূর্ব ৩০০০-২৫০০ অব্দের মধ্যে, তারাই ভারতে বেদ চর্চা করতে থাকে এবং তারা সমগ্র ভারতে তা ছড়িয়ে দেয়। আর্য জাতিগোষ্ঠিরা অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলত। তারা চারটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল এরা হলঃ ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র। এই সম্প্রদায়গুলো তৈরি করার অন্যতম কারণ হল কাজ ভাগ করে নেওয়া